উদযাপিত হলো গারোদের উৎসব ‘ওয়ানগালা’ ও আদিবাসী মেলা
ফিডেল ডি সাংমা
বিগত ২৮ অক্টোবর-১২ মধুপুর উপজেলার সাইনামারী গ্রামে মহাড়াম্বরে উদযাপিত হলো গারোদের উৎসব ‘ওয়ানগালা’ এবং এর পাশাপাশি আদিবাসী মেলা। ফাঃ ইউজিন হোমরিক সিএসসি-র মিশা পরিচালনায় এ ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ২ সহস্রাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারমেন মোঃ আব্দুল গফুর মন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মীর ফরহাদুল আলম মনি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জষ্টিনা নকরেকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং দেশ বিদেশের অতিথিবৃন্দ।
সংস্কৃতি, উৎসব কে না ভালোবাসে? মানুষ বা যে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন; তেমনই মনেরও প্রয়োজন রয়েছে সুখ, আনন্দ ও পরিতৃপ্তির। আর এ চাহিদা পূরণ করে তাদের দৈনন্দিন জীবনের কৃতকর্ম এবং সামাজিক রীতিনীতি। পৃথিবী থেকে চমৎকৃত হওয়ার মত সংস্কৃতি লালন ও পালনকারীদের বাছাই করতে হলে বোধকরি আদিবাসীদের নামই সর্ব প্রথমে আসাটা অধিক যুক্তিযুক্ত। এদের মধ্যে একটি জাতির নাম গারো জাতি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এ জাতি সপ্রনোদিত ভাবে এবং আনন্দের সাথে বিভিন্ন সময় নিজস্ব উৎসবসমূহ পালন করে থাকে। তথাপি স্বীকার করতেই হয়, এ জাতি এখন প্রায় শতভাগই খ্রীষ্টিয়ান হওয়ায় খ্রীষ্টান ধর্মযাজকদের হস্তক্ষেপ এবং বিধি নিষেধের ফলে অনেক পার্বন পালন থেকে দূরে সরে গেছে। ভুলে যেতে বসেছিলো তাদের প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আনন্দময় নির্মল সংস্কৃতি। অধুনা, এ গারো খ্রীষ্টিয়ানরা যেমন তাদের আদিধর্মের দেবতাদের স্থলে একমাত্র ঈশ্বরকে আরাধনা করছে; তেমনই আদিধর্মের দেবতা সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতি ও উৎসবগুলো যতদূর সম্ভব মোডিফাই বা রেক্টিফাই করে এর পুনচর্চা শুরু করেছে । গারোদের আদিধর্মের নাম, সাংসারেক। প্রাচীন ব্যাবিলন, গ্রিস, মিশর, চীন, পারস্য, রোমান-দের মত গারোরাও সূর্যদেবতার পুজা করত। গারোদের এ সূর্যদেবতার নাম ‘মিসি সালজং’; যার সন্মানার্থে ‘ওয়ানগালা’ উৎসব পালিত হয়।
আদি গারোদের বিশ্বাস- জগতের সৃষ্টিকর্তা, তাতারা-রাবুগা, সমস্ত উদ্ভিদ ও শস্যাদির জীবনের ভার সূর্যদেবতা সালজং-এর উপর দিয়েছেন। আর দেবতা সালজং-এর অনুগ্রহ আশীর্বাদের উপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। আর এই জন্যই তাঁর আশীর্বাদ যাচনা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনের উৎসবই হচ্ছে ‘ওয়ানগালা’। আদিকালে এ উৎসব মদ-মাংস খেয়ে, দিনরাত নেচে গেয়ে, তিনদিন ব্যাপি পালন করা হত। ‘ওয়ানগালা’ উৎসব সাংসারেক অধ্যুষিত এলাকায় এখনও তিনদিন পালিত হয়। কিন্তু অধুনা গারো খ্রীষ্টিয়ানরা একদিনেই পর্বটি পালন করছেন। তবুও পালনকারীদের ভেতরে আনন্দের কমতি নেই…।
ঐতিহ্যগতভাবে ফসলী, উৎসর্গ, ধন্যবাদ, নবান্ন ইত্যাদি উৎসবগুলোর মতই ফসল তোলার পরে ওয়ানগালা উৎসব পালিত হয়। আদিকালে এ উৎসবের আগে কেউই নতুন চালের ভাত বা কোন ফসল শস্যাদি খেত না। এখনও অনেকেই এই রীতি মেনে চলেন। এমন কি যারা খ্রীষ্টান হয়েছেন, তাঁরাও গীর্জায় দান/উৎসর্গ করার পরই সে সব গ্রহণ করেন।
ফিডেল ডি সাংমা – কবি, লেখক
ছবি- শামীম আকন্দ
